তারকেশ্বর মন্দির কিভাবে প্রতিষ্ঠা হয়?প্রতিষ্ঠা থেকেই অলৌকিক লীলা,জানুন তারকেশ্বরের রহস্য

তারকেশ্বরের বাবা তারকনাথের (Baba Taraknath) মাহাত্ম্য নিয়ে নানা রহস্যময় কাহিনি রয়েছে। কখনও অসুস্থ মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে বাঁচিয়ে তুলেছেন বাবা, কখনও অন্ধ ভক্তকে চোখ ফিরিয়ে দিয়েছেন, কখনও বা বাবার কৃপায় নিঃসন্তানের কোল আলো করে এসেছে সন্তান, আবার সৎ পরিশ্রমী ভক্তের সংসারের অভাব অনটন দূর করে তাঁকে সমৃদ্ধ করেছেন বাবা তারকনাথ। শুধু ভক্তি ভরে পুজো করলেই বাবা খুশি। প্রতি সোমবার শিবলিঙ্গকে গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে, বেলপাতা আর বাতাসায় তাঁকে স্মরণ করলেই বাবা তুষ্ট। 

শ্রাবণমাস শিবের মাস। তাই এই মাসের সোমবারগুলোতে তারকেশ্বরে বাবার মন্দিরে ভক্তের ঢল নামে। বাঁকে করে জল নিয়ে দূরদূরান্তর থেকে পায়ে হেঁটে যান ভক্তরা। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ভোর থেকেই তারকেশ্বরে শুরু হয়ে যায় পুজোপাঠ। পুরো রাস্তা হেঁটে যাওয়া তো সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই অনেকে শ্যাওড়াফুলি পর্যন্ত ট্রেনে বা গাড়িতে গিয়ে বাকি পথটুকু হাঁটেন। তারকেশ্বর মন্দিরের উত্তরে রয়েছে দুধপুকুর। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই দুধপুকুরে ডুব দিয়ে স্নান করে এই পুকুরের জল কলসে ভরে বাবার মাথায় ঢাললে সব মনোস্কামনা পূর্ণ হয়। শ্রাবণের চারটি সোমবার ছাড়াও শিবরাত্রি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে ভক্তরা বাবার কাছে নিজের মনের কামনা জানিয়ে দুধপুকুরে ডুব দেন। পণ্ডিতরা মনে করেন, শ্রাবণের প্রতিটা দিনই শিবের উপাসনার জন্য আদর্শ। পুরো মাস ব্রতপালন করলে মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।

```

অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা থেকে শিবভক্ত মানুষ বিষ্ণুদাস এসেছিলেন হুগলি জেলার রামনগরে। এখানেই তিনি সপরিবারে থাকতে শুরু করেন। জায়গাটি তখন বনজঙ্গলে ভরা ছিল। বিষ্ণুদাসের ভাই ভারমল্ল রোজ বনে যেতেন ফলমূল ও মধু সংগ্রহ করতে। প্রায়ই তিনি লক্ষ করতেন একটি বড় কালো রঙের শিলাখণ্ডের ওপর গাভীরা এসে দুধ দিয়ে য়ায়। এই অদ্ভুত ঘটনা তিনি তাঁর দাদাকে বলেন। শিবভক্ত বিষ্ণুদাস বনে এসে এই দৃশ্য দেখে শিহরিত হন। এর পরের রাতেই দেবদিদেব তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন। বলেন, ‘তোমার সাধ্যমতো আমার মন্দির তৈরি করে পুজো শুরু করো।’ বিষ্ণুদাস তাঁর ভাই ভারমল্লকে শিবমন্দির তৈরির ভার দেন। 

বিষ্ণুদাসের কথা শুনে খুব আনন্দ পেয়েছিলেন ভারমল্ল। তিনি লোকলস্কর নিয়ে বনে গেলেন সেই অলৌকিক শিলাখণ্ডকে তুলে আনতে। শিলাখণ্ডটি দিয়ে শিবলিঙ্গ তৈরি করিয়ে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু বাবা তারকনাথ আবার তাঁর লীলা দেখালেন। সেই শিলাখণ্ড এক চুলও সরাতে পারলেন না কেউ। চিন্তায় আকুল হলেন ভারমল্ল। বাবা তারকনাথ স্বপ্নাদেশ দিলেন, ‘এই শিলা কাশী পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই সরানো যাবে না। না সরিয়ে ওখানেই আমার মন্দির প্রতিষ্ঠা করো।’ তাই হল। সুন্দর একটি আট চালা মন্দির তৈরি হল। সামনে বিশাল নাটমন্দির। ভক্তরা এই নাটমন্দিরে বসেই বাবা তারকনাথের কাছে নিজের মনের কথা বলেন, তাঁর নাম জপ করেন। উত্তরে দুধপুকুর। অন্যদিকে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির ও কালী মন্দির। শান্ত পরিবেশ। তবে এই শ্রাবণমাসে ভক্তের স্রোতে কিছুটা উত্তাল হয় তারকেশ্বর মন্দির চত্বর। গুরু পূর্ণিমার দিন থেকে শুরু হয়ে যায় শ্রাবণী মেলা।

```

এবারেও চলছে মেলা।দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বারোটি উল্লেখযোগ্য শিবলিঙ্গের মধ্যে অন্যতম তারকেশ্বরের বাবা তারকনাথ। কারণ স্বয়ম্ভু শিবলিঙ্গ খুব কমই আছে এখানে। বিষ্ণুদাস-ভারমল্লের তৈরি এই মন্দির বিভিন্ন রাজার আমলে বারবার সংস্কার হয়েছে। তবে আটচালা মন্দিরের রূপ কেউ বদল করেননি। বাবা তারকনাথ যেমন সাদামাটা থাকতে ভালবাসেন, তেমনই পরিবেশ তারকেশ্বর মন্দিরের। শুধু ভারত নয়, সারা পৃথিবী থেকে শিবভক্তরা ছুটে আসেন এই শ্রাবণের শুভ দিনগুলোয়। লীলাময় বাবা তারকনাথের কাছে উজাড় করে দেন নিজেদের। ভক্তের মনের সব ইচ্ছে পূর্ণ করেন বাবা।